ভালোবাসার গল্প : আচ্ছা তাই…সই…

রাস্তাটা এবড়োখেবড়ো । রিকশাওয়ালা উল্কার বেগে রিকশা চালানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েছে সম্ভবত । সাজ্জাদ ঝাঁকুনি খেতে খেতে ভাবছিল বাড়ি পৌঁছানোর আগে গায়ের হাড়গোড় আস্ত থাকলে হয় ! রাত বাজে আড়াইটা । এত রাতে রিকশার প্রতিটা ঝাঁকুনি যে পরিমান বিকট শব্দ তৈরি করছে তা আর কিছুক্ষন চলতে থাকলে গাঁয়ের লোকজন ঘুম ভেঙ্গে উঠে আসবে লাঠি সোটা নিয়ে । এক পাশে ছোট একটা খাল অন্য পাশে ধানী জমি । মাঝে শিমলতা ,সুপারি,নারকেল গাছ আর বুনো ঝোপঝাড়ে ছাওয়া কাঁচা পাকা রাস্তা । ঝিঁঝিঁ ডাকছে ক্লান্তিহীন । রিকশার টিমটিমে হ্যারিকেনের আলো আর সাজ্জাদের হাতে ধরা টর্চটার আলো নিশুতি রাতের আঁধার কাটানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে । রিকশাওয়ালা জোয়ান মরদ । গায়ে জোর আছে বেশ । খুব দ্রুত তালে প্যাডেলে পা চালাচ্ছে । একটু কেমন যেন । সরকার বাড়ির দক্ষিনে নাকুন্দপাড়া কমসে কম দশবার বলার পর তারপর রিকশাওয়ালা চুপচাপ মাথা হেলিয়ে রিকশায় ওঠার ইঙ্গিত করেছে । সরকারবাড়ির সামনে আসতেই একটা দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো সাজ্জাদ । কত দিন পর এই দৃশ্যটা দেখছে সে ! ছোটবেলায় একদিন বাবার হাত ধরে গভীর রাতে হাট থেকে ফেরার সময় ঠিক এই দৃশ্যটা দেখে সে থমকে দাড়িয়ে গিয়েছিল । । বিশাল দীঘির একূল ওকূল চোখে পড়েনা । শ্বেত পাথরে বাঁধানো ঘাট । মাঝদীঘিতে একরাশ শাপলা ফুটে আছে । শাপলাবন ঘিরে হাজার হাজার জোনাকের নাচের আসর । দীঘির অন্ধকার জলে ফোটা ফোটা জোনাক আলোর ছায়া । নিশুতি রাতের হিম বাতাসে তিরতির করে কাঁপছে দীঘির কালো জল । মনে হচ্ছে আকাশের সব নক্ষত্র জলের মায়ায় দীঘিতে নেমেছে । তন্ময় হয়ে তাকিয়েছিল সাজ্জাদ । ব্যাগটায় হাত বুলিয়ে তৃপ্তিতে চোখ মুদল ও । আজ চাঁদ উঠলে পরশু ঈদ । ছেলেটার জন্য সোনালি সুতোয় বোনা পাজামা পাঞ্জাবি আর আয়েশার জন্য শাড়ি আলতা চুড়ি । শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের জন্যেও অনেক কিছু কিনেছে । সারাদিনের ক্লান্তিতে গা ভেঙ্গে আসতে চাইছে ওর । । ঢাকা থেকে দিনাজপুর সহজ জার্নি নয় । একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরি করে সাজ্জাদ । । দিনরাত গাধার খাটনি । বেতনও অত বেশি নয় । সাতপাঁচ ভাবছিল । গোরস্থান ঘেষে যাওয়ার সময় বাবা মায়ের কবরের বেড়াটা চোখে পড়ল ওর । একটু বিমর্ষ হয়ে গেলো সাজ্জাদ । গতবছর মা একটা শাড়ি চেয়েছিল । সাদা শাড়ি । সাজ্জাদ সবার জন্য কেনাকাটা করেছিল সেবার । ওর শালা সম্বুন্ধী শ্বশুর শাশুড়ি সবার জন্য । শুধু মায়ের শাড়িটা কিনতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল ।সেই ঈদের দুদিন পরেই মা মারা গিয়েছিলেন । কাফনের সাদা কাপড়ে জড়ানো মায়ের পা ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল সাজ্জাদ । একটু ঝিম ধরেছিল । রিকশার তীব্র ঝাকুনিতে সচকিত হলো সে। হঠাত্ খেয়াল হলো ওর একটু যেন বেশিই নীরব হয়ে গেছে আশপাশ । গা ছমছম করা নিস্তব্ধতা নেমেছে রাস্তা জুড়ে ! ঝিঁঝির ডাক থেমে গেছে । একটু গা শিরশির করে উঠল বিনা কারনে আর টর্চটা শক্ত হাতে আকড়ে ধরল সাজ্জাদ । কি ভেবে পিছন ফিরল ও । রিকশার হুডের ফাঁক দিয়ে ফেলে আসা রাস্তাটার দিকে তাকাল ও । চমকে উঠে চোখ বড় বড় হয়ে গেল সাজ্জাদের ! অন্ধকার রাস্তাটা ধরে পুরো শরীরে সাদা কাপড়ে জড়ানো একটা মানুষ প্রবল বেগে দৌড়ে আসছে ।সাদা কাপড় হাওয়ায় উড়ছে । অপার্থিব সেই দৃশ্য দেখে সাজ্জাদের গলা শুকিয়ে গেল । প্রচন্ড ভয় পেয়ে সামনে ফিরল ও । কাঁপা কাঁপা স্বরে একটু চেঁচিয়ে উঠল , ও ভাই একটু তাড়া তাড়ি চালান ! রিকশাওয়ালা নির্বিকার ।যেন শুনতেই পায়নি । পিছন রাস্তা থেকে কে যেন মায়াবী কন্ঠে ধীর স্বরে চিত্কার করে ডেকে উঠলো , 'খোকা ও খোকা আমার জন্য কিছু আনিসনি ? একটা সাদা শাড়ি ? গতবছরও আনলিনা .. সাজ্জাদ থরথর করে কেঁপে উঠলো ! এই কন্ঠ সে চেনে ! জন্ম থেকে শুনে এসেছে ! এ তার মায়ের কন্ঠ ! রিকশা প্যাডেলের ক্যাঁচকোঁচ শব্দ হচ্ছে অবিরাম ! "ও ভাই একটু শুনেন কে যেন আসতেছে একটু তাড়াতাড়ি চালান" ,সাজ্জাদ কম্পিত স্বরে রিকশাওয়ালাকে ডাক দেয় । রিকশাওয়ালা পিছন ফেরেনা । রিকশা ঝাঁকুনি খেতে খেতে চলেছে আগের মতই ! একটা নিশাচর পাখি ডানা ঝাপটে উড়ে গেল । বুনো লেবুর গন্ধ ভেসে আসছে । আচমকা পিঠের উপর ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ ! সাজ্জাদ শিঁরদাড়া সোজা করে স্থির হয়ে গেল ! কানের কাছ বেয়ে ঘামের ফোটা টপ টপ ঝরতে শুরু করেছে । ভয়ে আতংকে বোধশুদ্ধি লোপ পেয়ে গেল ওর । হিমশীতল স্পর্শটা ওঠানামা করছে ওর পিঠের উপর ,যেন কেউ আদর করে হাত বোলাচ্ছে ওর পিঠে । "ও খোকা মানিক আমার" , ওর মায়ের কাতর কন্ঠটা ফিসফিস করে বলছে , " আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা ,আমার জাদুর কপালে টিপ দিয়ে যা !খোকা আমার ,লক্ষী আমার , বাছা আমার এখনো খাসনি ? আমার সাথে চল মাছের মুড়ো রেঁধে খাওয়াব তোকে । কবরে শিয়াল বাসা বেঁধেছেরে আমি ঘুমাতে পারিনা বাছা । শাড়ি এনেছিস খোকা ? একটু দেখি ? ও খোকা .. তোর বাবার ও খুব কষ্ট হয় তোকে না দেখে । আয় খোকা একটা চুমু দিই তোর কপালে .. পিছ ফির .. খোকা .. ও খোকা .. আতংকে দিশেহারা সাজ্জাদ শক্ত করে টর্চটা আকড়ে থরথর কাঁপতে থাকে । ফিরবেনা ফিরবেনা করেও পিছ ফেরে ও। যেন কেউ জোর করে ওকে পিছন ফিরালো ! রিকশার হুডের ফাঁকে ঘোমটা ঢাকা একটা মাথা আবছা অন্ধকারে মুখ বাড়িয়ে রেখেছে । জ্ঞানহারাবার প্রাকমুহুর্তে কপালে একটা শীতল ঠোঁটের স্পর্শ টের পেল সাজ্জাদ ! নাকুন্দপাড়ার বাজারে একটা দোকান তখনো আধখোলা ছিল । দোকানি দোকান গুছিয়ে মাত্র ঘুমানোর পায়তারা করছিল । রিকশাওয়ালা করিম বিরক্ত হয়ে অজ্ঞান পেসেঞ্জারটাকে দোকানে নিয়ে এসেছে । সে কানে কম শুনে । পেসেঞ্জারটা খামাখা একটু আগে জোরেসোরে চিক্কুর পেড়ে রিকশা থেকে ফাল মেরে বেহুঁশ হয়ে গেছে । টর্চলাইট ভেঙ্গে হাতে কাঁচের টুকরো গেঁথে রক্তারক্তি কান্ড ! করিম বিরক্ত হয়ে গালি দেয় গোটা দশেক । মহামুসিবত ! - বিকেল চড়ুই

বাবা মেয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে বলছেন-যা বেটা যা, আপনে রাজকে পাস যা, যা সিমরান, যা জিরে আপকে জিন্দেগী, যা বেটা যা…সিমরান ব্যাকুল হয়ে দৌড়াচ্ছে। তার ওড়না বাতাসে উড়ছে। ট্রেনের গতি বাড়ছে। রাজ ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে আছে। ব্যাকগ্রাউণ্ডে বাজছে তুঝে দেখা তুয়ে জানা সানাম গানের স্পেশাল ইন্সট্রুমেনটাল। আবার এদিকে দারুচিনি দ্বীপের ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। বল্টু দৌড়াচ্ছে। তার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে মোনা। যে করেই হোক ট্রেনটা ধরতেই হবে।
বিচিত্র কোন কারণে ট্রেন অদ্ভুত এক রোমান্টিক বাহন। আর স্টেশন যেন মডিফাইড কোন বৃন্দাবন। এখানে প্রতিনিয়ত প্রতিক্ষার দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ে, এখানে ছিটকে পড়ে আবেগ,কখনও কেন্দ্রীভূত হয়। রচিত হয় ভালোবাসার অপূর্ব সব মুহূর্ত…এখানেই নীলার সাথে আবিরের প্রথম আলাপ।
পদ্মা এক্সপ্রেসে তারা ঢাকা থেকে রাজশাহী আসছিল। সামনা সামনি সীট। আবিরের বাবার দুই তিন কারো সাথে কথা না বললেও চলে তাই তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন। এদিকে নীলার বাবা অনেক ক্ষণ ধরে কথা না বলতে পারায় হাঁসফাঁস করছিলেন। মেয়ের সাথে তিনি কথা বলছেন। কিন্তু অপরিচিত একজন সামনে বসে আছে, ছয় ঘণ্টা বসে থাকবে, তার সাথে কোন কথা হবে না, এটা তো অনুচিত—
–আপনারা রাজশাহী যাচ্ছেন?
আবিরের বাবা জবাব দেয়ার জন্য জানালা থেকে মুখ ঘুরানোর আগেই আবির বলল—
হ্যাঁ আংকেল। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে কাল আমার ভর্তি। এ জন্যই যাচ্ছি।
আবির সরাসরি না তাকালেও চুপি চুপি কয়েকবার নীলা দিকে তাকিয়েছিল। বেশ তো মেয়েটা। মেয়েটির সামনে মেডিকেল ছাত্র বলে একটু ভাব নেয়া যায় এজন্যই বোধ হয় তার এই শশব্যস্ত উত্তর। কিন্তু যখন জানা গেল মেয়েটিও একই কাজে রাজশাহী যাচ্ছে তখন আবির খানিকটা চুপসে গেল।
নীলার বাবা হাসতে হাসতে বললেন- তাহলে তো ভালোই হল। তোমরা পরিচিত হও।
‘আমি আবির, আমি নীলা’। ট্রেনের ভেতর তাদের মধ্যে আর কোন কথা হয়নি। এরপরে কথা হয় অডিটোরিয়ামে। সেখানেই ভর্তির কার্যক্রম চলছিল। নীলা ওজন না মেপেই মেডিকেল টেস্টের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আবির ব্যাপারটা খেয়াল করেছিল।
–তুমি ওয়েট নিয়েছো?
এতো বড় ভুল কিভাবে হল-এমন একটা ভাব নিয়ে নীলা বলল- না তো।
আবির—আগে ওয়েট নিয়ে আসো।
তারা লাইনে আগে পরে ছিল। ওয়েট নিতে যাওয়ায় নীলা কয়েকজনের পেছনে পড়ে গেল। আবিরের ইচ্ছে করছিল সামনে থেকে তার পেছনে গিয়ে দাঁড়াতে। যাহোক চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা ইত্যাদির লজ্জায় সেটা সম্ভব হল না।
সেদিনের সেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার অদ্ভুত অনুভূতি আজকাল নতুন করে ভাবায় আবিরকে। আগের যত সুখ স্মৃতি মনে পড়ে অযথায়। লেখক হুমায়ুন আহমেদ কোথায় যেন লিখেছিলেন- স্বামী স্ত্রীর তালাকের পর কয়েকমাস খুবই ডেঞ্জারাস। সব সময় মনে হবে কি যেন হারিয়ে ফেললাম। দুজনের মধ্যেই একটা অনুশোচনা তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে। ইশ! দুজনকে দুজনকে আর একটু ছাড় দিয়ে যদি চলা যেত।
ইদানিং আবিরের মধ্যেও এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তার বারবার মনে হচ্ছে এই ব্রেক আপ হবার পেছনে নীলার কোন দোষ নেই। যা কিছু হয়েছে তার জন্য। সবকিছুর জন্য সে দায়ী। এখন বারবার মনে হচ্ছে- সেদিন কথা গুলো না বললেই বোধ হয় ভালো হতো-
–নীলা, কথাটা তোমাকে কিভাবে যে বলব, বুঝতে পারছি না।
নীলা যেন এমন কথা এজিবনে শোনে নি। কি অদ্ভুত ধাঁচে কথা বলছে আবীর। সে এই আবীরকে চেনে না।
–আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা, কেন তুমি এভাবে ফর্মাল ভঙ্গিতে কথা বলছ?
আবীর ইতস্তত করে বলল—বুঝতে পারছি না, কথাটায় তুমি কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে? আই অ্যাম টোটালি কনফিউজড।
নীলা বিরক্ত হয়ে বলল—তোমার এই সব ফর্মাল টাইপ কথাবার্তা আমার অসহ্য লাগছে। যা বলবা ষ্ট্রেইট বল।
–আমার আর ভালো লাগছে না।
–ভালো লাগছে না মানে কি? কি ভালো লাগছে না? আমাকে?
–তোমাকে না। বাট প্রেম করতে আর ভালো লাগছে না। আমি বোধ হয় তোমাকে কথাটা বোঝাতে পারছিনা ঠিক মতো।
নীলার মনে হল আকাশটা তার মাথায় ভেঙ্গে পড়েছে। হঠাৎ করে তার চারপাশের পৃথিবীটা যেন থেমে গেছে। কিন্তু পৃথিবী জানে সে অসম্ভব শক্তি নিয়ে এই গ্রহে এসেছে। মানসিক শক্তি। তবু কেন জানি ওর গলাটা কাঁপছে…
–ফাজলামি করছ তো করো? আমি যেদিন করবো সেদিন বুঝবে এই ধরণের ফাজলামিতে কি রকম ফিলিংস হয়। কতটা কষ্ট হয়।
–আমি আসলে সবই বুঝতে পারছি। কিন্তু এক বছর আগে আমার মনের যেখান থেকে তোমার জন্য একটা টান উঠেছিলো, সেইখানটাই আর কিছু নেই। এখন যদি আমরা একপথে হাটি তবে সেটা হবে জোর করে। আমি তোমাকে বোধ হয় ঠিক বোঝাতে পারছি না।
নীলার দুচোখ জ্বলে ভরে যাচ্ছে। সেতো এরকম মেয়ে নয় যে শুধু কেঁদেই যাবে। সে যুক্তিতে বিশ্বাসী। তার গলাটা তখনো ধরে আসে নি তাই…
–তোমাকে কিচ্ছু বোঝাতে হবে না। আবীর তুমি শুধু একটা কথা বল – অন্য কোন মেয়েকে কি তোমার পছন্দ হয়েছে। এতো আবেগি, অলৌকিক,কাব্যিক ব্যাখ্যা দেয়ার কিছু নেই। মনের টান তান এসব আমাকে কিচ্ছু বোঝাতে হবে না। তুমি শুধু ষ্ট্রেইট বল কাকে তোমার এতো ভালো লাগছে।
–বিশ্বাস সেটা আসলে তোমার নিজস্ব ব্যাপার। কাউকে ভালো লাগার জন্য তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না। আমি যতটুকু আবেগ নিয়ে তোমার সাথে একই পথে চলা শুরু করেছিলাম দিন দিন তা কমে যাচ্ছে আমার দিক থেকে। তোমাকে এই আবেগহীন ভালোবাসা দিতে ইচ্ছে করছে না বলেই আমি মুক্তি চাইছি।
–জীবনটা আশিকি ৩ মুভির স্ক্রিপ্ট না আবীর। তুমি শাহরুখের ছেলে না আর আমিও শ্রীদেবির মেয়ে না। তাই সিনেমার ডায়ালগ আমার সামনে দিও না। তুমি যে এতটা হিপোক্রেট হতে পারো এটা আমি জীবনেও কল্পনা করতে পারিনি।
আবীর বলল—এটা তুমি এখন বলতেই পারো। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তুমি ব্যাপারটা বুঝবে। তুমি একজন যুক্তিবাদী শিক্ষিত মেয়ে। ভেবেছিলাম তুমি বুঝবে। এই একটা রিস্পন্সিবিলিটি, ধার বিহীন এই ডোবার মতো জীবন আমার আর ভাল লাগছে না। পথের পাঁচালীর অপু সারাজিবন যে মুক্তির সন্ধান করেছে। সেই মুক্তি আমাকে প্রবল ভাবে টানে। ভেবেছিলাম তুমি বুঝবে এসব।
–তার মানে তুমি সন্ন্যাসী হতে চলেছ অদুর ভবিষ্যতে।
–এরকম কোন ইচ্ছে নেই। আবার কোনদিন যদি মনে আবার সেই টান অনুভব করি তবে আবার ভালোবাসব। হয়ত তোমার মতো মেয়ে আমি আর কখনো পাবো না কিন্তু এই মুহূর্তে এই অনিশ্চয়তার জীবনে তোমাকে সাথে নিয়ে পথ চলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমার নিজের একটা জীবন আছে। একটা আলাদা জগত আছে…
নীলা আবীর কে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিল। বলল— তারপর তোমার একদিন মনে হল তুমি আর টান অনুভব করছ না, তারপর তুমি তাকে ছেড়ে দেবে। বাহ কোন ক্যারেক্টার তোমার মধ্যে ডেভেলপ করছে বুঝতে পারছ। একে আমি লুচ্চামি ছাড়া কিছুই বলব না। আর তুমি যদি রিসপন্সিবিলিটি যদি নাই নিতে পারো তবে সেদিন প্রেম করেছিলে কেন। কেন আমার পিছে পিছে ঘুরেছিলে?
–আমি আসলে সবকিছুর জন্য সরি। এক বছর আগে প্রেম সম্পর্কে আমার অন্য ধরণের অনুভূতি ছিল। একটা কৌতূহল ছিল। প্রেমের রহস্য ভাঙ্গার প্রবল ইচ্ছে ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই সব দেখা জানার পর আমার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এরকম হয়ত অনেক জুটি পাবে যাদের মধ্যে সেই প্রথম দিনের টান আর নেই কিংবা একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে তবু তারা একসাথে বাস করে, একসাথে পার্কে বসে বাদাম খায়, বিকেলে পদ্মার পাড়ে ঘুরতে বের হয়। আমি এই ভণ্ডামি টুকু করতে পারবো না। আমি জানি…
আবিরের আর কথা বলা হল না। কারণ নীলা আর দাঁড়াল না। আরও অনেক কথা বলার ছিল। ঠিক মতো বোঝেনি মেয়েটা। আবীর তবু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। একবছরের অভ্যাস। মেইন গেটের ভেতরে গিয়ে নীলা আবার বেরিয়ে আসতো। কোন একটা কথা হয়তো বলা হয়নি। আবিরের মনে হচ্ছিলো আজো সে আসবে। তার আবেগময় আরও কিছু যুক্তি তাকে শুনতে হবে।

অবিনাশ ফিরে এসেছিল রানীর কাছে শুধু এ কথা বুঝতে যে রাণীর শরীরের সাথে অন্য মেয়েদের শরীরের কোন পার্থক্য নেই। সে সুখ পেত না। কারণ তার বারবার মনে হতো রানীর মধ্যে আলাদা কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। আসলে কোন রহস্য নেই। এটাই সে মনকে বোঝাতে ফিরে এসেছিল।
আবিরকে কি এভাবে কখনো ফিরে আসতে হবে। সে অনেকবার ভেবে দেখল নীলার কোন ব্যাপারটা এখনও তাকে টানছে। কিসের রহস্য তার এখনও জানা হয়নি। কোন রহস্য নেই। তবু নীলার কথা মনে পড়ছে। সেদিন টেবিলের বই গোছাতে গিয়ে কয়েকটা গোলাপের পাপড়ি মনে করিয়ে দিল গত ১১/১২/১৩ কথা। একটা সাদা আর একটা লাল গোলাপ নিয়ে সে লেডিস হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে নীলাকে ফোন দিয়েছিল অনেক বার। ফোন ধরল না কেউ। ফুলগুলো আর দেয়া হলনা। টেবিলের উপর অযথায় শুকিয়ে গেল ওরা। আর হাতের কাঁটা দাগটা। যেখানে কাঁটা কাঁটা ইংরেজি অক্ষরে লেখা NILA…এটাই আজকাল বড্ড বেশি জ্বালাতন করে আবিরকে। সে চায় সবকিছু ভুলে যেতে। হাতে রুমাল বেঁধে থাকতে হয় তাকে। আবার গভীর রাতে নীলা এসএমএস করে।
–আবীর, তুমি সেদিন যে কথা গুলো বলেছ, আমি জানি সেগুলো তোমার মনের কথা না। তুমি তোমার সমস্যাটা আমাকে বল। আমার কোন ব্যাপারটা তোমার ভালো লাগছে না। আমি আরও কমপ্রমাইজ করে চলতে রাজি আছি। তুমি এমন কেন করছ আবীর? প্লিজ এভাবে আমাকে কষ্ট দিও না।
আবিরের মনে হয়, মেয়েটা বাইরে বাইরে অনেক বেশি কঠিন, অতিযুক্তিবাদী, রাগি হলেও তার মনটা আসলেই খুব সাধারণ। আবিরের প্রচণ্ড কষ্ট হয়। কিন্তু সে জানে এই কষ্টটা সাময়িক। যদি সম্পর্কটা জোড়া লাগে তবে আবার সেই মুক্তির জন্য ছটফট করবে তার অন্তরাত্মা।

ওগো নিরুপমা, করিও ক্ষমা
তোমাকে আমার ঘরণী করিতে আমার মনের দোসর করিতে
পারিলাম না, পারিলাম না তো কিছুতেই…
কিশোর কুমারের এই গানটি সেদিন এক চায়ের দোকানে বসে শোনার পর আবিরের মনে হল এই গানটি আসলে তার জন্যই লিখা হয়েছিল। এতো খারাপ লাগলো ওর। তার উপর আবার অনিক এসে বলল—নীলা নাকি হাত কেটে সুইসাইড করতে গিয়েছিলো।
কথাটা বিশ্বাস হতে চাইল না আবীরের। নীলার মতো জীবনবাদী একটা মেয়ে যে সুইসাইড করতে পারে হাত কেটে এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এক বছর আগে সে নিজে যখন হাতে নীলা লিখেছিল তখন নীলা খুব কড়া কড়া কথা তাকে শুনিয়েছিল।
–এসব সিনেমাটিক ন্যাকামি ব্যাপার স্যাপার আমার পছন্দ না আবীর। এরকম ক্লাউনের মতো আচরণ না করলে খুশি হবো।
সেই মেয়ে আজ হাত কেটে বসে আছে। এটা কি আদৌ সম্ভব। সারাদিন আবীরের আনমনা কাটল। বারবার মনে হচ্ছিলো কি দরকার ছিল ব্রেক আপের। ভালোবাসা নাই থাকল, দুজনে পাশাপাশি থাকলাম একটু অভিনয় করলাম। এতে অন্তত একজন মানুষ ভালো থাকত। জীবনটা কি শুধু নিজের জন্য। অপু যে কাজল কে নিসচিন্দ পুর রেখে শুধু নিজের জন্য নিজের মুক্তির জন্য বের হয়ে গেল এটা কি এক ধরণের স্বার্থপরতা। শুধু নিজের জন্যই বাঁচা। সে রাতে আবীরের ঘুম হল না।

নীলা এখনও আশা ছাড়তে পারেনি। তার মনে হচ্ছিলো আবীর তার সাথে দীর্ঘ একটা নাটক করছে। একটা পর্যায়ে এসে সে হয়তো বলবে—আমার অভিনয় টা কেমন ছিল। নীলা অপেক্ষা করছিল সে ক্লাইম্যাক্সটার জন্য। এখন তার মন শান্ত হয়েছে, শক্ত ও হয়েছে। ব্রেকআপের পর কদিন অনেক কান্নাকাটি করেছে। খাওয়া দাওয়া ঠিক হয়নি। এক্সাম ছিল। সেটা ঠিক মতই দিয়েছে। পড়ার সাথে প্রেমের কখনো সে কম্প্রমাইজ সে করেনি। কারণ মা বাবার দিকটাও সবসময় তার মাথায় ছিল। কিন্তু জীবনটা কেন এতো এলোমেলো হয়ে গেল তার। সেতো আগে প্রেমে পড়েনি। অনেক বুঝে শুনে ভেবেচিন্তে সময় নিয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল সে। সে খুঁজে পেলো না তার ফলটটা কোথায়? যদি আবীর আসলেই ব্রেক আপ চায় তাহলে এর পেছনে কোন মেয়ে আছে এ বিষয়ে তার কোন সন্দেহ নেই, আবীর যতই কবি কবি ডায়ালগ দিক। গতরাতে সে আবীরকে একটা চিঠি লিখেছে। বেশ কড়া ভাষায় লিখেছে। অধিকার টা এখনও ছাড়তে পারেনি বলেই হয়তো…সে ড্রয়ার থেকে চিঠিটা বের করল- দেখা যাক কোন ইডিট করা যায় কি না…
কোন ঢঙ করার দরকার নাই শুধু আবীর লিখলেই হবে। তার মনে হল।
আবীর
আমি অনেক ভেবে একটা কারণ বের করেছি। যে কারণে তুমি এক নিমিষেই সম্পর্কটা শেষ করে দিতে চাচ্ছ। আমার মনে হল—ইদানিং তুমি বিয়ে নিয়ে ভাবছ। হয়ত তোমার মনে হচ্ছে আমার সাথে কোপ উইথ করা তোমার সম্ভব হবেনা। কারণ অতি সাধারণ ঘরণী হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার সাথে হয়ত কষ্ট করে প্রেম করা যায় কিন্তু বিয়ে করা যায় না। বিয়ে করতে হয় খুব ভদ্র,সুশীলা, অমায়িক, লাজুক একটা মেয়েকে। যে তোমার কথা মতো উঠবে, বসবে। যার নিজের কোন মত থাকবে না। যে রাতে তোমার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করবে। কোন অভিযোগ থাকবে না। তোমার ইচ্ছে মতো সে বিছানায় যাবে। মেইন কথা তোমার কমপ্লিট সেবাদাসী কেউ একজন। আমি জানি তুমি সৎ বলেই আমাকে আর ঠকাতে চাচ্ছনা। তোমার মনে হচ্ছে আমাকে বিয়ে করলে তোমার সাথে আমার মতের মিল হবে না। তোমার আব্বা আম্মার সাথে আমি তর্ক করবো। তুমি ডানে বললে আমার ডান নাও পছন্দ হতে পারে। এই জন্যই তুমি সরে যেতে চাচ্ছ আমার কাছ থেকে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি। সম্পর্কের এতো দূর এসে তুমি এভাবে চলে যেওনা। মাঝপথে আমাকে একা ফেলে চলে যেওনা প্লিজ। আমি কথা দিচ্ছি তোমার মনের মতই সবকিছু হবে। দেখ আবীর, একদিন তুমি আমাকে জয় করে নিয়েছিলে, আজ তুমি আমাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করছ। তুমি ক্যাম্পাসে তখনও ছিলে নায়ক আজো তুমি নায়ক মাঝখান থেকে আমি ভিলেইন হয়ে গেলাম। অনেকেই বলছে আমিই নাকি তোমাকে কষ্ট দিতাম। এভাবে আর আমাকে অপমানিত করো না আবীর। তুমি তো জান অপমান ব্যাপারটা আমি ভীষণ ভয় করি, জান না তুমি? তুমি এতো সহজে কিভাবে সবকিছু ভুলে গেলে। কত স্বপ্ন, কত প্ল্যান আমরা করে রেখেছিলাম। পাশাপাশি থাকার কত প্রতিজ্ঞা। আমরা দুজনে জব করবো। রাতে একসাথে বাসায় ফিরবো। খুব ছোট্ট সংসার হবে আমাদের। আমাদের ঘরে একটা পিচ্চি আসবে। এতো এতো স্বপ্ন দেখায়ে কেন তুমি দুঃস্বপ্নে হারিয়ে যাচ্ছ। তোমার দেয়া গিফট গুলোর দিকে আমি তাকাতে পারিনা। মাঝে মাঝে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি। মনে হয় জনশূন্য এক এক প্রান্তরে আমি হারিয়ে গেছি। কোথাও কেউ নেই। ভয়ানক চোরাবালিতে আমি ডুবে যাচ্ছি। আমি ব্যাকুল হয়ে তোমাকে ডাকছি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। চারদিকে অন্ধকার নামছে। আমার বাড়িয়ে অযথায় হাতড়ে বেড়াচ্ছে তোমাকে। প্লিজ আমার হাতটা ধরো। এভাবে শুন্য পাথারে আমাকে একা ফেলে চলে যেওনা। প্লিজ প্লিজ প্লিজ…
নীলা

একজন মানুষকে কাঁদিয়ে আর কত মুক্ত হওয়া যায়। জীবন দিয়ে মেয়েটা তাকে ভালবাসে। আবীরের টা কমলেও হয়ত তারটা বাড়ছে। ঠকলেই যদি সে ভালো থাকে। অলীক ভালোবাসা দিয়ে যদি সে পুতুলের ঘর বাঁধতে চাই বা পারে। তবে তাই হোক। আবীর ঠিক করলো সে সরি বলবে। এফবি তে সে তাকে আনব্লক করলো। তারপর ফোন দিল। এতো লজ্জা লাগছিল তার। এক বছর পূর্বে সে প্রথম যখন নীলাকে ফোন দেয় তখনো এতো বিব্রত বোধ করে নি সে। দুইবার ফোন দেয়ার পর নীলা ফোন ধরল।
–নীলা, আমি জানি তুমি আমার উপর ভয়ঙ্কর রেগে আছো। হয়ত আমাকে নির্লজ্জ ভাবছ। এতো কিছুর পর কেন তোমাকে ফোন দিলাম। তোমার যত খারাপ লাগুক, প্লিজ তুমি আমার সাথে আর একটি বার দেখা করো। আমাদের সেই স্পেশাল জায়গায় আমি অপেক্ষা করবো। তুমি কি আসবে?
ঐ পাশ থেকে উত্তর এলো না। লাইনটা কেটে গেল। আবীর তবু কিছুক্ষণ ফোনটা কানে ধরে রাখল।

নীলা শাড়ি পরে এসেছিল। তার মুখে ছিল রাগ। মনে চন্দ্রবিজয়ের আনন্দ। মুখে কঠিন একটা ভাব থাকলেও কেমন একটু লজ্জা লজ্জা ভাব। তাদের প্রেমের প্রথম দিনগুলোর মতো। অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছিলো সারা শরীর বেয়ে। নীলা চিঠিটা আবীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে কঠিন গলায় অন্যদিকে তাকিয়ে বলল—যদি ইচ্ছে হয় চিঠিটা পড়।
আবীর হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নিলো। প্রথম থেকে শেষ দুইবার পড়ল। আবীরের মনে হল এ কি করতে যাচ্ছে সে। তার চোখ মুখ কঠিন হয়ে এলো। প্রথম থেকেই তারা দুজন ছিল নারী মুক্তি নারী স্বাধীনতার পক্ষে এক সক্রিয় সৈনিক। যে নারী স্বাধীনতার পক্ষে, নারীদের আত্মার উন্নতির পক্ষে, নারীদের ব্যক্তিত্তের পক্ষে কথা বলে এসেছে আজ সে কোন প্রেমের জন্য এতটা নিচে নেমে এলো। একটা ছেলে সকালে বলবে ব্রেকআপ, মেয়ে কাঁদবে আবার বিকালে এসে বলবে-সরি, মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরবে। এটা কোন ধরণের মানুষিক উন্নতি। এখানে নারীর ব্যক্তিত্ত বলে তো কিছু থাকল না। সেতো নির্জীব পুতুল ছাড়া আর কিছু না। প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা। তাদের চিন্তা ভাবনা আলাদা, আচারআচরণ আলাদা, তার জগত আলাদা। একটা মেয়ে তার নিজস্ব জগত ছেড়ে, সবকিছু ধ্বংস করে শুধু প্রেমের জন্য বেরিয়ে এসেছে। হয়ত কথা উঠতে পারে ছেলেটি তার জগত কেন মেয়েটির সাথে শেয়ার করলো না। এটা হয় না। একটা পূর্ণ মানুষের জন্য একটা পূর্ণ জগত দরকার। নারী চেতনার এমন সৈনিক নীলার আজ যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হবে। আবীরকে আজ জড়িয়ে ধরে কেঁদে কাল সে কোন মুখে নারীদের ব্যক্তিত্তের কথা বলবে, কোন মুখে সবাইকে বলবে পুরুষের ভণ্ডামি সহ্য না করতে…
প্রায় পনের মিনিট ধরে তাদের মধ্যে কোন কথা হয়নি। এক সময় নীলা বিরক্ত হয়ে বলল—তুমি কিছু বলবে, নাকি আমি চলে যাবো।
আবীর বুঝল নীলার গলাটা ধরে আসছে। সে জানে আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে নিশ্চিত কেঁদে ফেলবে। আবীর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল—এভাবে আমি তোমাকে চাইনি। এভাবে নিঃস্ব করে তোমাকে আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারবো না। তোমার যে আজ নিজের বলতে কিছুই রইল না। কিচ্ছু না।
নীলা বুঝতে পারলো না তার কি বলা উচিৎ। কিন্তু তাকে কিছু একটা বলতে হবে। সে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল—আর কিছু বলার নেই আবীর, আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম কিন্তু শেষ বারের মতো একটা সত্যি কথা বলে যাও, তুমি কেন আমার সাথে এমনটা করলে? বলবে প্লিজ?
আবীরের খুব বলতে ইচ্ছে করলো— কিছুটা পাওয়া যায়, কিছুটা যায় না, তাই সই…
আবীর আর দাঁড়াল না। কারণ তার চোখের জল নীলাকে দেখাতে ইচ্ছে করছে না। নীলা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। সে একবারও পেছনে তাকায় নি। তবু সে দেখতে পাচ্ছে। লাল শাড়ি পরা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর সব বিস্ময় চোখে নিয়ে। তার কাজল ধুয়ে যাচ্ছে অশ্রুতে। শাড়ি পরে থ মেরে তবু দাঁড়িয়ে রয়েছে মেয়েটি একলা। শাড়িতে তাকে ইন্দ্রাণীর মতো দেখানো উচিৎ কিন্তু তাকে দেখাচ্ছে বাংলাদেশের আর আট দশটা মেয়েকে যেমন লাগে তেমন…

লেখা- নাহিদ হাসান
সেকেন্ড ইয়ার এমবিবিএস
রাজশাহী মেডিকাল কলেজ

Related posts

Leave a Comment